বৃহস্পতিবার

৩০শে মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ
১৬ই চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ

আজ কি বিশ্বকাপে শেষ ম্যাচ কাভানি–সুয়ারেজের

শেষ সুযোগ—এই শব্দযুগল এবারের বিশ্বকাপে যেন শুধু লিওনেল মেসির জন্যই রাখা! কিন্তু এটি তো সম্ভাব্য শেষ বিশ্বকাপ আরও অনেক তারকারই। লুইস সুয়ারেজ ও এদিনসন কাভানি তাঁদের মধ্যে দুজন। এবারের বিশ্বকাপে উরুগুয়ের কিছু পাওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন না বলেই হয়তো কাভানি–সুয়ারেজ জুটিকে নিয়ে কেউ কিছু বলছেন না। কিন্তু বাস্তবতা হলো, তাঁরা দুজনও একটা সোনালি প্রজন্মের স্বপ্নসারথি ছিলেন!

হ্যাঁ, ছিলেনই লেখা হচ্ছে। কারণ, উরুগুয়ের সমর্থকেরা এ দুজনকে ঘিরে এখন আর স্বপ্ন দেখেন না। উরুগুয়ের ফুটবলপ্রেমীদের স্বপ্নের আবর্তন এখন দারউইন নুনিয়েজ–ফেদে ভালভের্দের মতো তরুণ প্রজন্মকে নিয়ে। মাঠের পারফরম্যান্সেও নতুন প্রজন্মের কাছে উরুগুয়ের সোনালি প্রজন্মের এই দুই তারকা এবার ম্লান। গ্রুপ পর্বে দুটি ম্যাচ খেলেছে উরুগুয়ে। প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে গোলশূন্য ড্র ম্যাচে প্রতিপক্ষের গোল লক্ষ্য করে কোনো শটই নিতে পারেনি তারা। পরে পর্তুগালের কাছে ২–০ ব্যবধানে হেরে যাওয়া ম্যাচে অবশ্য গোলে ৪টি শট নিতে পেরেছে উরুগুয়ে।

kavani
উরুগুয়েকে জিততে হলে জ্বলে উঠতে হবে কাভানিকেও

পর্তুগালের গোল লক্ষ্য করে উরুগুয়ে যে শট নিয়েছে, এর একটিও কাভানির নয়। বদলি হিসেবে নামা সুয়ারেজ অবশ্য একটি শট নিতে পেরেছেন গোল লক্ষ্য করে। যদিও সে শট দলের কোনো কাজে আসেনি। সব মিলিয়ে দুই ম্যাচ শেষে কবীর সুমনের একটি গানের সঙ্গে মিলিয়ে উরুগুয়ের সোনালি প্রজন্মের অন্যতম সেরা দুই তারকা বলতে পারেন, ‘বড় বেরঙিন আজকাল, কাছাকাছি কোনো রঙ পাই না, তাই দিতে পারি না কিছু, কিছুই রাঙানো হলো না।’

সত্যিই তো, কিছুই রাঙানো হলো না কাভানি–সুয়ারেজের! কানায় কানায় পূর্ণ না হলেও ক্লাব ফুটবলে দুজনই সাফল্য কুড়িয়েছেন দুই হাত ভরে। বার্সেলোনার হয়ে চারটি লা লিগা, একটি চ্যাম্পিয়নস লিগসহ ১৩টি শিরোপা জিতেছেন সুয়ারেজ। আতলেতিকো মাদ্রিদের হয়েও একটি লা লিগা শিরোপা জয়ের আনন্দে মেতেছেন উরুগুয়ের সালতোতে জন্ম নেওয়া ছেলেটি। সুয়ারেজের পৃথিবীর আলো দেখার এক মাসের কম সময়ের মধ্যে একই শহরে জন্ম নেওয়া কাভানি পিএসজির হয়ে ছয়টি ফ্রেঞ্চ লিগ ‘আঁ’–সহ জিতেছেন ছোটবড় ২১টি শিরোপা।

ক্লাব ফুটবলে এত এত সাফল্য পাওয়া কাভানি–সুয়ারেজ উরুগুয়ের হয়ে কী পেলেন? পৃথিবীর আলো যেমন আগে–পরে দেখেছেন, উরুগুয়ে দলে সুয়ারেজ ও কাভানির আবির্ভাবও তেমনি। সুয়ারেজ উরুগুয়ের জার্সি গায়ে তুলেছেন ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে, কাভানি এক বছর পর। উরুগুয়ে দলে দুজনের একসঙ্গে পথচলার শুরু ২০০৮ সাল থেকে। ১৪ বছরের যুগল পথচলায় উরুগুয়ের হয়ে তাঁদের অর্জন একটিমাত্র কোপা আমেরিকার শিরোপা, যেটি তাঁরা জিতেছিলেন ২০১১ সালে। সেই সময় দিয়েগো ফোরলান, সুয়ারেজ, কাভানিদের ঘিরে কত কী পাওয়ার স্বপ্নই না দেখেছিলেন উরুগুয়ের ফুটবল–রোমান্টিকরা।

সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপান্তর করতে পারেননি কাভানি–সুয়ারেজরা। উরুগুয়ের সোনালি প্রজন্মের আলো নিভতে শুরু করেছে আরও আগে থেকেই। এখন নিবু নিবু শেষ জোড়া প্রদীপ কাভানি–সুয়ারেজও। তাঁদের শেষবেলায় খুব বেশি প্রত্যাশা নেই। উরুগুয়ের মানুষের এখন চাওয়া শুধু একটাই—রাঙিয়ে দিয়ে যাও যাও, যাও গো এবার যাবার আগে! নিজেদের আপন রাগে, পারফরম্যান্সের অরুণ ঝলকে সেটা কি করতে পারবেন কাভানি–সুয়ারেজ!

কাভানি–সুয়ারেজ কাতারের সবুজ মাঠে আল্পনা আঁকবেন পায়ের জাদুতে, ১৮ ডিসম্বেরের অস্তরাগ মায়াবি হবে তাঁদের হাতে ওঠা সোনালি ট্রফিতে—এমন স্বপ্ন উরুগুইয়ানরা এবার দেখেনি। কিন্তু যদি আজ ঘানাকে হারিয়ে উরুগুয়েকে শেষ ষোলোতে তুলতে পারেন তাঁরা, এরপর শেষ ষোলো থেকে যদি আরও একধাপ এগোনো যায়…এটুকু তো তাঁদের কাছে চাইতেই পারেন উরুগইয়ানরা!

শেষ পর্যন্ত যদি উরুগুইয়ানদের সে আশাটুকুও তাঁরা পূরণ করতে না পারেন, যদি ঘানাকে হারাতে পারলেও সমীকরণের প্যাঁচে আটকে পেরোনো না হয় গ্রুপ পর্বের বৈতরণী; তাহলে আর কী–ই বা বলতে পারেন কাভানি-সুয়ারেজ! কবীর সুমনের গানের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে হয়তো ‘যা কিছু নেই, নাই বা হলো সব পাওয়া, না পাওয়ার রং নাও তুমি’ বলে বিদায় নেবেন উরুগুয়ের ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা দুই তারা!

আরও সংবাদ

spot_img

সর্বশেষ সংবাদ